শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ অপরাহ্ন
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানির সময় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের মোবাইল হঠাৎ বেজে ওঠার কারণে তা ১৫ মিনিটের জন্য জব্দ করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার সকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। এরপর মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন আদালত।
শুরুতে মোবাইল কোর্টের পক্ষে শুনানি করতে ডায়াসের সামনে আসেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর- উল ইসলাম। শুনানির এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার এম আমীর -উল ইসলামের মোবাইল হঠাৎ বেজে ওঠে।
এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ব্যারিস্টার এম আমীর -উল ইসলামকে উদ্দেশ করে হেসে বলেন,আইন সবার জন্য সমান। আপনাকে যদি কনসিডার করি তাহলে অন্যরা ভাববে সিনিয়র দেখে কনসিডার করা হলো। আপনার মোবাইল ফোনটি দেন। এটা ১৫ মিনিটের জন্য ‘সিজ’ করা হলো, আদালতের হেফাজতে নেয়া হলো।
ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলামও হাসি মুখে মোবাইল ফোনটি বেঞ্চ অফিসারের হাতে তুলে দেন। এরপর আবার শুনানি শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহ্য অনুযায়ী, মামলা চলাকালীন সময়ে আদালত কক্ষে মোবাইল ফোন বেজে উঠলে তা জব্দ করার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানা করা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি মো. দেলাওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আদালত কক্ষে মোবাইল ফোন বেজে উঠলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল জব্দ করা সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহ্য, অলিখিত নিয়ম।
নিজের বিচারিক জীবনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একবার আদালত চলাকলীন সময়ে আমার ফোন বেজে উঠেছিল। তখন বিচারক হওয়ার পরেও আমার নিজের (মুঠোফোন) ফোন বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জব্দ করে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলাম।
এর আগে গত ১১ মে (২০১৭ সাল) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনার ধারাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি ধারা ও উপধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ মে (২০১৭ সাল) আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের এই রায় ১৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে দেন। একই সঙ্গে ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯) ৫, ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০, ১১, ১৩ ও ১৫ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ধারাগুলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে (নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ) ক্ষমতার পৃথকীকরণ-সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোবিরোধী।
অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা ও বিতর্ক এড়াতে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়া বিষয়গুলো ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া সব আদেশ, সাজা ও দণ্ডাদেশ অতীত বিবেচনায় সমাপ্ত বলে মার্জনা করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, আইনের ওই বিধানের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া সংবিধানের লঙ্ঘন ও তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সম্মুখ আঘাত এবং ক্ষমতার পৃথকীকরণের নীতিবিরোধী।